নব অরুণ
সোমনাথ দাশগুপ্ত
আজ আমাদের মনখারাপ। আজ কলমের, কালির, শব্দের, বাক্যের, যতিচিহ্নদেরও মনখারাপ। আজ বৃহস্পতিবার, ৩১ শে জুলাই, ২০১৪ খ্রীষ্টাব্দের বিকেল চারটে কুড়ি মিনিটে, মর্ত্যযাপনের হাসিখেলা থেকে আমাদের সঙ্গত্যাগ করে চলে গেলেন কবি, সাহিত্যিক এবং এযুগের লেখালেখির ইতিহাসে বিদ্রোহপ্রতিম শ্রী নবারুণ ভট্টাচার্য। বিজন-ভট্টাচার্য-ও-মহাশ্বেতা-দেবীর-সন্তান পরিচয় অতিক্রম করে যাঁর সাহিত্যকৃতি বহুদিন সগরিমায় প্রতিষ্ঠিত।
অগ্ন্যাশয়ের কর্কট এক অনারোগ্যসম্ভব ব্যাধি, এখনও। চিকিৎসাকল্পে মুম্বাই, দিল্লী হয়ে অবশেষে ঠাকুরপুকুর ক্যান্সার হাসপাতালে। গত শনিবারে শয্যালগ্ন, অক্সিজেন মাস্কের নিচে জেগে থাকা মুখ মনে পড়ে। ডাক্তার আশাত্যাগ করতে বলেছেন তারও কয়েকদিন আগে। অথচ বছরখানেকের কিছু বেশি আগে যখন দেখা করতে গিয়েছিলাম বাড়িতে, তখন অসুস্থতা বলতে শুধু ইনসুলিনজর্জর ডায়াবেটিস। তার আগে দেখাশোনা-মুখচেনাটুকু ছিল বইমেলানির্ভর। সোভিয়েত বইপত্রের ব্লগমাধ্যমে সংরক্ষন প্রচেষ্টার শুধু মৌখিক উৎসাহদান নয়, সেই মুহূর্তে নিজে ফোন করে অন্তত বিশজন পরিচিতের কাছে আবেদন করেছিলেন আমাদের বই দিয়ে সাহায্য করতে। চোখে আগুন ছিল, চোয়াল দৃঢ়, ঠোঁটে খিস্তিপ্রশ্রয়। উদ্দীপনায় তারুণ্যস্পর্শী ছিলেন সেই একঘন্টা। কথা দিয়েছিলেন বড় করে খুব খেটে লিখবেন সোভিয়েত সাহিত্যের বঙ্গানুবাদের সঙ্গে ওতোপ্রোত থাকার তাঁর অভিজ্ঞতা। আমরাও কথা দিয়েছিলাম ব্লগ খোলা হলে এসে দেখিয়ে যাবো। ক্রমে ক্যান্সারসংবাদ, ক্রমে ছোটাছুটি, দুশ্চিন্তার মধ্যে বিরক্ত করতে না চেয়ে আমাদেরও আর যাওয়া হয়নি। ফোনে কথা হয়েছে দুয়েকবার। এখন একটা কেমন গরম শুকনো হাওয়ার মতো হাহাকার এসে শুন্য বুকে পাক খাচ্ছে, চোখ জ্বালা করছে, যে প্রশ্নের উত্তর জানা হয় নি, সেই প্রশ্নটা গলা টিপে ধরছে - নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে ক্রমশ ... নবারুণদা, এই ব্লগটা দেখেছিলেন তো? প্লীজ "না" বলবেন না।
No comments:
Post a Comment